
প্রকাশিত: Wed, Mar 1, 2023 4:16 PM আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 9:13 AM
‘পাঠান’, ভারতীয় লেখকদের বই এবং আমাদের সৃজনশীলতা
রহমান বর্ণিল ; বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় সিনেমা ‘পাঠান’ মুক্তির প্রসঙ্গে আমাদের চলচ্চিত্রের স্বঘোষিত রাঘববোয়ালরা বেজায় গোস্যা হয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বলিউডের সিনেমা বাংলাদেশে চললে দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি খুব খুঁজে খুঁজে এদের প্রত্যেকের বদনখানী দেখলাম। এবং বুঝলাম বলিউডের সিনেমা দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া মানে আমাদের চলচ্চিত্র এবং চলচ্চিত্র শিল্পীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পড়া, আর অন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পড়া মানে নিজদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া জেনেই এরা দেশের প্রেক্ষাগৃহে বিদেশি চলচ্চিত্র মুক্তির বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরে একই বিতর্ক চলছে দেশের সাহিত্য অঙ্গনেও। ভারতীয় লেখকদের বই বাংলাদেশে আনার ব্যাপক বিরোধিতা করছেন দেশের কিছু কিছু লেখক, সাহিত্যিক এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ‘সব শেয়ালের এক রা’ এর মতো আমাদের তথাকথিত লেখক এবং প্রকাশকরাও বলছেন, বাংলাদেশি সাহিত্য ও প্রকাশনা শিল্প ধ্বংস হবে ভারতীয় লেখকদের বই বাংলাদেশে বাজারজাত করলে।
সিনেমার নামে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যেগুলো বানাচ্ছে এবং অভিনয়ের নামে আমাদের শিল্পীরা যে নাচনকোঁদন করছে, পৃথিবীর অন্যন্য দেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে তুলনা করলে এগুলো গার্বেজ ছাড়া আর কিছুই না। গার্বেজে তাও জৈবসার তৈরি হয়, আমাদের চলচ্চিত্রগুলোর (গুটিকয়েক চলচ্চিত্র এবং গুটিকতক শিল্পী বাদে) সেই গুণও নেই। একইভাবে সাহিত্যের নামে যা হচ্ছে তার বেশির ভাগই আবর্জনার নামান্তর। লেখার মান নেই, সাহিত্যে ন্যূনতম প্রতিভা নেই, পড়াশোনা নেই, দর্শন নেই, চিন্তার সক্ষমতা নেই, কিন্তু ফি-সন বই বের করে যাচ্ছে। এ তো গেলো নতুনদের কথা। বড় লেখক তকমা নিয়ে যাঁরা সাহিত্যে নিজেকে হোমরাচোমরা ভাবছে, তাদের বেশির ভাগ গায়ে-গতরে বড়, নইলে বয়সে বড়। সাহিত্য প্রতিভায় বড় লেখকের সংখ্যাও এখন হাতগোনা। এই সাহিত্যপ্রতিভাহীন বড় লেখকরা আর ওই মেধাহীন চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পীরাই মূলত ভারতীয় সিনেমা এবং ভারতীয় বই বাংলাদেশে আনার বিপক্ষে। কারণ এগুলো দেশে আসলে এরা যে এতদিন সিনেমার নামে ছাগলামো, সাহিত্যের নামে পাগলামো গিলিয়েছিল দেশের মানুষকে সেইসব জারিজুরি উন্মোচিত হয়ে যাবে।
পাড়ায় একটিমাত্র চায়ের দোকান থাকলে সেই দোকানের চা খাওয়ার অযোগ্য হয়। কারণ প্রতিযোগি না থাকায় দোকানি জানে চায়ের নামে গরম পানিগুলে দিলেও খদ্দেরেরা খেতে বাধ্য। কিন্তু একাধিক দোকান থাকলে খদ্দের হারানোর ভয়ে দোকানি চা বানানোয় যত্নবান হয়। উন্নতি হয় চায়ের, উপকৃত হয় চা-প্রেমীরা। শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্রের ব্যাপারটাও এমন। দেশে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র, বিশ্বসাহিত্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো সাহিত্য সৃষ্টির পূর্বশর্ত হচ্ছে এগুলোর উন্মুক্ত বাজার তৈরি করা। দেশের সিনেমাহলে বিদেশি চলচ্চিত্র, বইমেলায় এবং বুকশপগুলোয় দেশি লেখকদের বইয়ের পাশাপাশি যদি বিদেশি লেখকদের বইও সহজলভ্য হয়, তাহলে লেখকরা তার সৃষ্টির দিকে মনোযোগী হবে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও পেশাদার হবে। প্রতিভাবান টিকে থাকবে, প্রতিভাহীনরা ছিটকে পড়বে।
বিশ্বায়নের যুগে আঞ্চলিকতায় আঁকড়ে থাকাটাই বড় অযোগ্যতা। অথবা অযোগ্যরাই আঞ্চলিকতায় আঁকড়ে পড়ে থাকতে চায়। একজন চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং সাহিত্যসেবী হিসেবে আমি চাই শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সব দেশের চলচ্চিত্র এবং সাহিত্যে দেশের বাজার সয়লাব হয়ে যাক। আমাদের সৃজনশীলতা থাকলে আমরা টিকে থাকবো, না থাকলে চলচ্চিত্রের নামে দর্শকরা, সাহিত্যের নামে পাঠকরা গার্বেজ গেলার হাত থেকে মুক্তি পাবে। লেখক: কথাসাহিত্যিক।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
